প্রতিদিন বিশ্বজুড়ে হাজার হাজার বিমান আকাশে উড়ে বেড়ায়। কিন্তু আপনি কি কখনো ভেবে দেখেছেন, যদি কোনো বিমানে বিদ্যুৎ আঘাত করে, তাহলে কী হবে? আশ্চর্যের বিষয় হলো, প্রতি ১,০০০ ফ্লাইট ঘণ্টায় গড়ে একটি বিমানে বিদ্যুৎ আঘাত করে। তবে এর পরেও যাত্রীরা নিরাপদে থাকেন। এই সুরক্ষার পেছনের বিজ্ঞানটি হলো ফ্যারাডে কেজ (Faraday Cage) এর নীতি। চলুন, এই বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা যাক।
বিদ্যুৎ আঘাতের পরিসংখ্যান এবং বিমানের সুরক্ষা
বিমানে বিদ্যুৎ আঘাত করা একটি সাধারণ ঘটনা। গবেষণা অনুযায়ী, প্রতি ১,০০০ ফ্লাইট ঘণ্টায় গড়ে একটি বিমানে বিদ্যুৎ আঘাত করে। তবে এই ঘটনায় খুব কমই দুর্ঘটনা ঘটে। এর প্রধান কারণ হলো বিমানের নকশা এবং এর ধাতব কাঠামো। বিমানের বাইরের অংশটি মূলত অ্যালুমিনিয়াম বা কার্বন ফাইবার দিয়ে তৈরি, যা বিদ্যুতের জন্য একটি সুপরিবাহী মাধ্যম। যখন বিদ্যুৎ বিমানে আঘাত করে, তখন এটি বিমানের ধাতব কাঠামোর মাধ্যমে প্রবাহিত হয় এবং ভূমিতে চলে যায়। এই প্রক্রিয়ায় বিমানের ভেতরের অংশ সম্পূর্ণ নিরাপদ থাকে।
ফ্যারাডে কেজ কী?
ফ্যারাডে কেজ হলো একটি ধাতব কাঠামো বা জাল, যা বৈদ্যুতিক চার্জকে এর বাইরের দিকে প্রবাহিত করে এবং ভেতরের অংশকে সুরক্ষিত রাখে। এই নীতিটি আবিষ্কার করেছিলেন বিখ্যাত বিজ্ঞানী মাইকেল ফ্যারাডে। ফ্যারাডে কেজের মূল কাজ হলো বৈদ্যুতিক ক্ষেত্রকে বাইরে রাখা এবং ভেতরের জিনিসপত্রকে বিদ্যুৎ থেকে সুরক্ষা দেওয়া।
বিমানের ধাতব কাঠামোও একটি ফ্যারাডে কেজের মতো কাজ করে। যখন বিদ্যুৎ বিমানে আঘাত করে, তখন এটি বিমানের বাইরের ধাতব অংশ দিয়ে প্রবাহিত হয় এবং ভেতরের যাত্রী বা ইলেকট্রনিক সরঞ্জামগুলিকে কোনো ক্ষতি করে না। এই প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণভাবে ফ্যারাডে কেজের নীতির উপর ভিত্তি করে কাজ করে।
বিমানের নকশায় ফ্যারাডে কেজের প্রয়োগ
বিমানের নকশায় ফ্যারাডে কেজের নীতিটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিমানের বাইরের অংশটি সাধারণত অ্যালুমিনিয়াম বা কার্বন ফাইবার দিয়ে তৈরি, যা বিদ্যুতের জন্য একটি সুপরিবাহী মাধ্যম। যখন বিদ্যুৎ বিমানে আঘাত করে, তখন এটি বিমানের ধাতব কাঠামোর মাধ্যমে প্রবাহিত হয় এবং ভূমিতে চলে যায়। এই প্রক্রিয়ায় বিমানের ভেতরের অংশ সম্পূর্ণ নিরাপদ থাকে।
বিমানের ইঞ্জিন, জ্বালানি ট্যাংক এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশগুলিও বিশেষভাবে ডিজাইন করা হয়, যাতে বিদ্যুৎ আঘাতের সময় কোনো ক্ষতি না হয়। এছাড়াও, বিমানের ইলেকট্রনিক সিস্টেমগুলিকে বিদ্যুৎ থেকে সুরক্ষিত রাখার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
বিদ্যুৎ আঘাতের পর কী হয়?

একটি বিমানে যখন বিদ্যুৎ আঘাত করে, তখন এটি সাধারণত বিমানের ডানার প্রান্তে আঘাত করে। এরপর বিদ্যুৎ বিমানের ধাতব কাঠামোর মাধ্যমে প্রবাহিত হয় এবং বিমানের পিছনের দিকে চলে যায়। এই প্রক্রিয়ায় বিদ্যুৎ বিমানের ভেতরে প্রবেশ করে না এবং যাত্রীরা সম্পূর্ণ নিরাপদে থাকেন।
বিদ্যুৎ আঘাতের পর বিমানের পাইলটরা স্বয়ংক্রিয় সিস্টেমের মাধ্যমে এই ঘটনা রেকর্ড করেন এবং ল্যান্ডিংয়ের পর বিমানটি পরীক্ষা করা হয়। যদি কোনো ক্ষতি হয়, তাহলে তা মেরামত করা হয়। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিদ্যুৎ আঘাতের ফলে বিমানের কোনো ক্ষতি হয় না।
যাত্রীদের জন্য সুরক্ষা ব্যবস্থা
বিমানে বিদ্যুৎ আঘাত করা একটি সাধারণ ঘটনা হলেও যাত্রীদের জন্য এটি কোনো ঝুঁকি তৈরি করে না। বিমানের ধাতব কাঠামো এবং ফ্যারাডে কেজের নীতির কারণে বিদ্যুৎ বিমানের ভেতরে প্রবেশ করতে পারে না। এছাড়াও, বিমানের ইলেকট্রনিক সিস্টেমগুলিকে বিদ্যুৎ থেকে সুরক্ষিত রাখার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
যাত্রীদের জন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সুরক্ষা ব্যবস্থা হলো সিট বেল্ট। বিদ্যুৎ আঘাতের সময় বিমানটি সামান্য কাঁপতে পারে, তাই যাত্রীদের সিট বেল্ট বাঁধা থাকা জরুরি। এছাড়াও, পাইলটরা এই ধরনের পরিস্থিতিতে যাত্রীদের শান্ত থাকার পরামর্শ দেন।
ফ্যারাডে কেজের অন্যান্য ব্যবহার
ফ্যারাডে কেজের নীতিটি শুধু বিমানে ব্যবহার হয় না, এটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রেও ব্যবহৃত হয়। উদাহরণস্বরূপ:
1. মাইক্রোওয়েভ ওভেন: মাইক্রোওয়েভ ওভেনের ভেতরের ধাতব প্রাচীরটি ফ্যারাডে কেজের মতো কাজ করে, যা মাইক্রোওয়েভ রেডিয়েশনকে ভেতরে রাখে এবং বাইরে আসতে দেয় না।
2. ইলেকট্রনিক ডিভাইস: কিছু ইলেকট্রনিক ডিভাইসকে বিদ্যুৎ থেকে সুরক্ষিত রাখার জন্য ফ্যারাডে কেজ ব্যবহার করা হয়।
3. বৈজ্ঞানিক গবেষণা: বৈজ্ঞানিক গবেষণায় ফ্যারাডে কেজ ব্যবহার করে বৈদ্যুতিক ক্ষেত্র থেকে সুরক্ষা দেওয়া হয়।
পরিশেষে বিমানে বিদ্যুৎ আঘাত করা একটি সাধারণ ঘটনা, তবে এর পরেও যাত্রীরা নিরাপদে থাকেন। এই সুরক্ষার পেছনের বিজ্ঞানটি হলো ফ্যারাডে কেজের নীতি। বিমানের ধাতব কাঠামো বিদ্যুতের জন্য একটি সুপরিবাহী মাধ্যম হিসেবে কাজ করে এবং বিদ্যুৎকে বিমানের ভেতরে প্রবেশ করতে দেয় না। এই প্রক্রিয়াটি যাত্রীদের এবং বিমানের গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশগুলিকে সুরক্ষিত রাখে।
ফ্যারাডে কেজের নীতিটি শুধু বিমানে নয়, আমাদের দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রেও ব্যবহৃত হয়। এটি বৈদ্যুতিক ক্ষেত্র থেকে সুরক্ষা দেওয়ার একটি কার্যকরী পদ্ধতি। তাই, পরের বার যখন আপনি বিমানে ভ্রমণ করবেন, তখন এই বিজ্ঞানের আশ্চর্য নীতিটি মনে রাখবেন, যা আপনাকে নিরাপদে রাখে।
Leave a comment