৩য় পর্ব পড়ার আগে ২য় পর্ব পড়ুন
পরদিন, ঋতু ও থমাস পুলিশ ক্লাবে যায়। ডেভিড তিনটি মেয়ের ছবি তার সামনে রেখে বলে, “আপনি কি এদের কাউকে চিনতে পারছেন?” ঋতু বলে, “না, আমি এদের চিনতে পারছি না।” এরপর থমাস ও মীরা ডাক্তার ম্যানুয়ালের সাথে দেখা করতে যায়। ডাক্তার ম্যানুয়াল মূলত ঋতুর চিকিৎসা করেন। মীরা হাসপাতালের পাশেই একটি বাগানবিলাসের গাছ দেখতে পায়। তবে তারা ম্যানুয়ালের কাছ থেকে সেরকম কোনো তথ্য পায় না।
পরদিন সকালে মীরা হাসপাতালে গিয়ে থমাসকে বলছে, “আমি ঋতুর উপরে একটা সাইকোলজিক্যাল অ্যানালাইসিস করতে চাই। হয়তোবা এর মাধ্যমে আমরা কোনো তথ্য পেতে পারি।” থমাসও এতে রাজি হয়। ঋতুকে একটি রুমে বসানো হয়। মীরা ঋতুকে বলে, “আপনার সামনে রাখা আলোটির দিকে তাকিয়ে আপনার খুশির মুহূর্তগুলো ভাবতে থাকুন। এর মাঝে মাঝে আমি আপনাকে প্রশ্ন করব, আর আপনি সেগুলোর উত্তর দিবেন।” ঋতু ভিশন দেখতে শুরু করে। সে বাচ্চাদের সাথে অনেক ভালো সময় কাটাচ্ছে। মীরা প্রশ্ন করে, “আপনি ছায়াকে চেনেন?” তখন ঋতু দেখতে শুরু করে, জঙ্গলের মধ্যে সে দৌড়াচ্ছে। দৌড়াতে দৌড়াতে সে এক পর্যায়ে একটি পুকুরে পড়ে যায়। ঋতু এর বেশি মীরাকে জানাতে পারে না।
মীরা থমাসকে জিজ্ঞেস করে, “ঋতু যে পুকুরের কথা বলল, আপনি কি সেটা চেনেন?” থমাস বলেন, “না, আমি এরকম কোনো পুকুর দেখিনি। হয়তোবা ঋতু এটা ছোটবেলায় দেখেছে।” এরপর মেয়েগুলো যেখান থেকে মিসিং হয়েছে, ঋতুকে সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু ঋতু কিছুই বলতে পারে না। মীরা এবার ঋতুর পেইন্টিং কেনা লোকটির সাথে দেখা করতে যায়। লোকটি মীরাকে জানায়, ঋতুর পেইন্টিংগুলো তার হাজবেন্ড থমাস কিনে নিয়ে যেত। এটা শুনে মীরা হয়, সে থমাসের সাথে দেখা করতে তার বাগানবাড়িতে আসে। মীরা পেইন্টিং এর ব্যাপারে জানতে চাইলে থমাস বলে, “ঋতুকে খুশি করার জন্য সে পেইন্টিংগুলো কিনে নিত।” মীরা পেইন্টিংগুলো দেখতে চাইলে সে মীরাকে পেইন্টিংগুলো দেখায়। মীরা থমাসকে জিজ্ঞেস করে, “এই বাড়িটি কি আপনার?” থমাস বলে, “এটা আমার দাদা দেবা আমাকে দিয়েছে।” এরপর মীরা জানালার পর্দা সরিয়ে বাগান ভিলা দেখতে পায়। মীরা হঠাৎ কোন জন্তুর আওয়াজ শুনতে পায়। সে থমাসকে জিজ্ঞেস করলে থমাস বলে, “আমি এখানে কুকুর, ছাগল সব পশুই পালন করি।” সব দেখে মীরা সেখান থেকে চলে আসে।
পরদিন সকালে থমাস ঘুম থেকে উঠে ঋতুর চিরকুটগুলো পরিবর্তন করে দেয়। ঋতু চিরকুট দেখে অবাক হয়ে যায়। সে হঠাৎ বমি করতে শুরু করে আর ভীষণ দেখে সে পুকুরে পড়ে যাচ্ছে। ঋতু থমাসকে বাচ্চাদের রুমে দেখতে পায়। থমাস ঋতুকে বলে, “বাচ্চাদের রুমে রাখা পেইন্টিংগুলো মিসিং।” এটা শুনে ঋতু বলে, “আমার মনে হয় এগুলো মীরা নিয়ে গিয়েছে।” থমাস হেসে বলে, “মীরা এস অব্দি কি করবে?” একটু পরে ডেভিড তাদের বাসায় আসে। ডেভিড প্রতিদিনের মতো তার পরিচয় দিতে গেলে ঋতু আজকে বলে, “আমি আপনাকে চিনতে পেরেছি।” এটা শুনে ডেভিড অবাক হয়। ডেভিড থমাসকে জিজ্ঞেস করে, “মীরাকে লাস্ট কবে দেখেছেন?” ঋতু বলে, “আমি তাকে কালকে দেখেছি।” ডেভিড ঋতুর কাছে এসে বলে, “কখন দেখেছেন?” ঋতু বলে, “দুপুরে না হয় সন্ধ্যায়।” থমাস ডেভিডকে বলে, “কি হয়েছে স্যার?” ডেভিড বলে, “মীরা কাল সন্ধ্যা থেকে মিসিং। তার বাবা বলছে, গাড়ির শব্দ শুনে সে দেখতে গিয়েছিল আর ফিরে আসেনি।” এরপর ডেভিড সিসিটিভির ফুটেজে দেখে, মীরা এখানে এসে দুটি পেইন্টিং নিয়ে গিয়েছে। ডেভিড চলে যেতেই থমাস তার বাগান বাড়িতে আসে। থমাস মাংস গ্রিল করে কুকুরদের খাওয়ায়।
এবার আমাদের থমাসের ফ্ল্যাশব্যাক দেখানো হয়। এই বাগানবাড়িটি ছিল থমাসের দাদা দেবার। থমাস ছোটবেলা থেকেই তার দাদাকে অনুসরণ করতো। একদিন দেবা থমাসকে বলে, “আমার যা কিছু আছে সবকিছুই তোমার।” গ্রামে একটি অনুষ্ঠান হচ্ছিল। দেবার লোকজন দুটি মেয়েকে ধরে আনে। থমাস সব লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছিল। দেবা একটি মেয়েকে মেরে ফেলে। এরপর তার কর্মচারীকে দিয়ে মেয়েটির শরীর টুকরো টুকরো করে কুকুরদের খেতে দেয়। থমাস সবসময় তার দাদার কাজকর্ম দেখতো। আস্তে আস্তে তার এসব ভালো লাগতে শুরু করে।
সিন প্রেজেন্টে আসে। থমাস এবার তার দাদার লাঠি নিয়ে বাগানবাড়ির বেসমেন্টে আসে। এখানে আমরা মীরাকে বাঁধা অবস্থায় দেখতে পাই। অন্যদিকে ঋতু অনেক কান্না করছে। রেমা কাছে এলে ঋতু বলে, “কাল মীরা এখানে এসেছিল তাই না?” রেমা বলে, “দিদি, আমি কাল তাড়াতাড়ি বাসায় গিয়েছিলাম তাই বলতে পারছি না।” এরপর তারা সিসিটিভির ফুটেজ দেখতে শুরু করে। ঋতু আগের দিনের ফুটেজ খুব মনোযোগ সহকারে দেখে। এরপর সে রেমাকে বলে, “থমাস এখন কোথায়?” রেমা বলে, “স্যার যেহেতু ট্রাক নিয়ে গিয়েছে, তাহলে সে বাগানবাড়িতেই আছে।” এরপর তারা বিজুকে নিয়ে বাগানবাড়িতে যেতে শুরু করে। রাস্তায় মীরার বাড়ি দেখে বিজুকে গাড়ি থামাতে বলে ঋতু। বাড়ির গেটে গিয়ে দাঁড়ায়।
রিমা ঋতুকে বলে, “দিদি, আপনি এখানে দাঁড়ান। আমি বাসা থেকে খোঁজ নিয়ে আসছি।” ঋতু দেখছে, মীরা তার সামনে এসেছে আর পেছনে দাঁড়িয়ে আছে থমাস। একটু পর তারা বাগান বাড়িতে আসে। এদিকে থমাস মীরাকে ইনজেকশন দিচ্ছে। গাড়ির শব্দ পেয়েই সে দ্রুত কুকুর গুলোকে ছেড়ে দেয়। এরপর সে ঋতু ও রেমাকে ঘরে আনে। সে তাদেরকে বলে, “তোমরা বসো। আমি বিজুর সাথে কথা বলে আসছি।” থমাস দরজা লক করে কোন কথাবার্তা ছাড়াই বিজুকে মারতে মারতে মেরেই ফেলে। এসব দেখে ঋতু রেমা দরজার লক ভেঙে বাইরে আসে। থমাসের এই রূপ দেখে তারা অনেক ভয় পায়। ঋতু রেমাকে পালাতে বলে।
রেমা দৌড় দেয়, তবে থমাসের হাত থেকে নিস্তার পায় না। এসব দেখে ঋতু বমি করতে শুরু করে। থমাস এসে ঋতুকে জিজ্ঞেস করে, “তুমি কি আমাকে চিনতে পারছো?” ঋতু বলে, “হ্যাঁ, তুমি থমাস।” থমাস ঋতুকে ঘরে আনে আর ঘুমাতে বলে। এরপর থমাস রেমাকে বেসমেন্টে এনে ইনজেকশন দেয়। তারপর সে তার রুমে ফিরে আসে। অন্যদিকে কুকুরগুলো বিজুকে ছিঁড়ে খাচ্ছে। থমাস ঋতুর পেইন্টিংগুলোতে আগুন জ্বালিয়ে নাচতে শুরু করে। ঋতু শুয়ে শুয়ে সব দেখছে।
চলুন এবার গল্পের জট খুলি। এক্সিডেন্ট হবার পর ডাক্তার তাদের জানায়, ঋতুর শর্ট টাইম মেমোরি লস দেখা দিবে। তাই তার যা ভালো লাগবে সেটাই করার সুযোগ দিতে হবে। তবে যে বিষয়গুলো সে ভয় পায়, সেগুলো থেকে তাকে দূরে রাখতে হবে। না হলে তার মেমোরি লস হবে। থমাস ঋতুর এই বিষয়টির ফায়দা তুলতে শুরু করে। থমাস মূলত তার দাদার মতো সাইকো। সে ঋতুকে অনেক টর্চার করতো। ঋতু পানি দেখে ভয় পেত, তাই থমাস ঋতুকে পানির ট্যাবেও চুবাতো। থমাস প্রতিদিন ঋতুর দ্বারা একটি করে মেয়েকে ডেকে আনতো। কিন্তু যাতে এসব ভুলে যায় তাই তাকে প্রতিদিন পানিতে চুবাতো। ঋতুও শখ খাওয়ার ফলে সব ভুলে যেত। এভাবে ডেভিডের খোঁজা মেয়েগুলোকে সে কিডন্যাপ করেছিল।
শুধু তাই নয়, সে মেয়েগুলোকে মেরে মাংসগুলো কুকুরকে খাওয়াতো। থমাস অনেক সতর্কতার সাথে এসব করতো। সে মেরে ফেলা মেয়েদের ঘড়ি, কাপড় এগুলোকে এক রুমে সাজিয়ে রাখতো। একদিন ঋতু মীরার বাসায় যায়। তাকে দেখে ঋতু বের হলে থমাস পেছন থেকে এসে তাকে ইনজেকশন দিয়ে অজ্ঞান করে আর বেসমেন্টে আনে।
চলুন এবার গল্পে ফিরি। প্রতিদিনের মতো থমাস আজকেও ঋতুকে পানিতে চুবাতে চায়। তবে ঋতু উল্টো থমাসকে পানিতে চুবিয়ে বাইরে আসে। বাইরে থাকা কুকুরগুলো ঋতুর পিছনে ছুটতে শুরু করে। এদিকে থমাস তার গান নিয়ে ঋতুকে পিছু করতে থাকে। ঋতু দৌড়াতে দৌড়াতে গিয়ে এক পুকুরে পড়ে যায়। এই সিনটি আমরা ঋতুর কল্পনায় দেখেছিলাম। তার মানে এমনটাও বেশ কয়েকবার হয়েছে। শেষমেষ থমাস ঋতুকে ধরে বেসমেন্টে আনে। সে ঋতুকে বলে, “আমি তোমাকে এখানে আনতে চাই না। আর আসলেও সমস্যা নেই, কাল তো ভুলেই যাবে।” সে একটি ইনজেকশন ঋতুকে দিয়ে বলে, “এটি তোমার শরীরে লাগাও।” তবে ঋতু এটা করতে চায় না। থমাস রেগে তার কাছে এলে সে থমাসের পায়ে ইনজেকশনটি ঢুকিয়ে দেয়। ইনজেকশনটি পায়ে ঢুকে ঠিকই, কিন্তু কোন ওষুধ তার শরীরে প্রবেশ করে না।
অন্যদিকে মীরা তাকে বাঁধা চেনটি তুলে থমাসের গলায় ধরে। মীরা ঋতুকে বলে, “তুমি দ্রুত গিয়ে পুলিশকে ফোন করো।” ঋতু যেতে চাইলে থমাস তার হাতে থাকা গানটি ঋতুর মাথায় ছুড়ে মারে। ফলে ঋতু অজ্ঞান হয়ে যায়। এরপর মীরার সাথে থমাসের অনেক হাতাহাতি হয়। তবে মীরা থমাসের সাথে পেরে ওঠে না। ঋতুর জ্ঞান ফিরে আসে। সে গানটি নিয়ে দাঁড়ায়। থমাস ঋতুকে দেখে বলে, “এই মেয়েটিকে গুলি করো। সে আমাকে আর আমাদের বাচ্চাদের মারতে এসেছে।” ঋতুর সব মনে পড়ে যায়। মীরা তাকে বলেছিল, তাদের কোন বাচ্চা নেই। এসব ঋতুর কল্পনা। ঋতু থমাসের দিকে গান ধরে বলে, “আমাদের কোন বাচ্চা নেই।” এরপর সে থমাসকে গুলি করে। এর কিছুক্ষণ পর ডেভিড বাগানবাড়িতে এসে পৌঁছে। সে তিনজনকে দেখে অবাক হয়।
পরদিন মীরা ডেভিডকে বলছে, “ঋতু রাখা ছবিগুলো আর থমাসের ব্যবহার দেখে আমার সন্দেহ হয়েছিল। আমি আপনাকে ফোন করে বলতেই চাচ্ছিলাম, ঠিক তখনই আমি গাড়ির আওয়াজ শুনতে পাই। গেটে তাকাতেই দেখি ঋতু দাঁড়িয়ে আছে। আমি ঋতুর সাথে কথা বলতে গেলে থমাস আমাকে অজ্ঞান করে বাগানবাড়িতে আনে। সত্যি বলতে গেলে, ঋতু নিজেই এই কেসটি সলভ করেছে।”
ডেভিড এসব শুনে অনেক দুঃখ প্রকাশ করে। সে ঋতুকে বলে, “আমরা শুধু তোমার উপরই ফোকাস করেছিলাম। থমাসের মত একজন ডক্টর এসব করবে, তা কল্পনা করতে পারিনি। আমরা বাগানবাড়ি থেকে ১৩টা মেয়ের জিনিসপত্র পেয়েছি, যাদের মধ্যে তুমি একমাত্র বেঁচে আছো। সে তোমাকে মারেনি, কারণ তোমার দ্বারা তার কাজগুলো আরো সহজ হয়েছিল।” এরপর ডেভিড ঋতুকে একটি ফাইল দিয়ে বলে, “তোমার আসল নাম এস্তারা ম্যানুয়েল। থমাস তোমাকেও কিডন্যাপ করেছিল।” ঋতু অবাক হয়ে ফাইলটি দেখতে শুরু করে। এসব জানতে পেরে সে অনেক ভেঙে পড়ে। কেস সলভ হওয়ার পর ডেভিড শহরে চলে যায়।
Leave a comment