প্রথম পর্ব:
নিস্তব্ধ রাত, গাড়িতে এক কাপল কোথাও যাচ্ছে। ছেলেটি গাড়ি চালাচ্ছে আর মেয়েটি তার কাঁধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে। এভাবেই কিছুদূর যাওয়ার পর রাস্তায় হঠাৎ গাড়িটির সাথে একটি ট্রাকের এক্সিডেন্ট হয় আর গাড়িটি গিয়ে রাস্তার একপাশে পড়ে যায়।
এরপর দৃশ্যপট পরিবর্তন হয়, উক্ত ঘটনার ঠিক আট বছর পরে দেখা যায় একটি মেয়ে যার নাম ঋতু – বাচ্চাদের রেডি করে স্কুল বাসের কাছে নিয়ে যাচ্ছে, বাচ্চারা একটু কথা কাটাকাটি করলেও ঋতু তাদের বুঝিয়ে বাসে তুলে দেয়।
স্কুল বাসটি বাচ্চাদের নিয়ে চলে যায় তবে ঋতু এক দৃষ্টিতে গেটের বাইরে তাকিয়ে থাকে। একটু পরে দুধওয়ালা এসে সাইকেলের বেল বাজালে ঋতুর হুশ ফিরে আসে। সে বাসায় এসে তাদের কাজের মেয়ে রেমাকে ডাকে, রেমা দৌড়ে তার কাছে আসলে ঋতু রেমাকে প্রশ্ন করে বাচ্চারা কোথায়? তারা কি স্কুলে গিয়েছে? রেমা বলে দিদি তারা তো স্কুলে গিয়েছে। ঋতু দ্রুত বাচ্চাদের রুমে যায় সে দেখতে পায় বাচ্চারা রুমে নেই। ঋতু রেমাকে বলে আমি ওদের বাসে তুলে দিয়েছি না তুমি দিয়েছো? রেমা বলে দিদি আপনি তুলে দিয়েছেন। মাত্র ১০ মিনিট আগের কথা আপনি ভুলে গেলেন !
এটা শুনে ঋতু অবাক হয়ে যায়, রেমা বলে দিদি আপনি ফ্রেশ হন আমি নাস্তা দিচ্ছি। এরপর ঋতু তার ড্রইং রুমে যায় এবং তার ডায়রি খুলতেই সেদিনের এক্সিডেন্টের কথা মনে পড়ে যায়। ঋতু এই ডায়রিতে সবকিছু লিখে রাখে।
তার ড্রইং অনেক পছন্দ তাই সে প্রতিদিন ড্রইং করে আর মোবাইলে ছবি তুলে রাখে। অন্যদিকে ঋতুর হাজবেন্ড থমাস এক ডাক্তারকে বলছে – আমি প্রতিদিন সকালে যখন বাসা থেকে বের হই- সে দরজায় দাঁড়িয়ে থাকে, কিন্তু যখন বাসায় আসি তখন সে আমাকে চিনতে পারে না।
ঋতু সবকিছুই ভুলে যায় আর কয়েকদিন সময় লাগে তার ঠিক হতে। ডাক্তার থমাস তাকে বলে সব ঠিক হয়ে যাবে স্যার আপনি চিন্তা করবেন না।
অন্যদিকে এক নার্স ছোট একটি বাচ্চাকে ইনজেকশন দেওয়ার চেষ্টা করছে তবে বাচ্চাটি কোনভাবেই ইনজেকশন নিতে চাচ্ছে না। থমাস বাচ্চাটির কাছে আসে এবং সে বাচ্চাটিকে আদর করে একটি ললিপপ দেয় আর তাকে অন্যদিকে ব্যস্ত রেখে ইনজেকশন পুশ করে। এরপর থমাস তার কেবিনে আসে এবং কেবিনে এক নার্স আসলে থমাস জানতে চায় আজ কতজন রোগী এসেছে? উত্তরে নার্সটি জানায় স্যার, পাঁচ- ছয় জন হবে আর কি! থমাস ঘড়ি দেখে বলে তাহলে দুইটার আগে বাসায় যাওয়া হচ্ছে না তাইতো। নার্স থমাসকে জিজ্ঞেস করে স্যার ম্যাডাম কেমন আছে?
থমাস বলেঃ সোজাসুজি বলতে গেলে, আমি পাশে থাকলেই সে খুশি থাকে মাঝে মাঝে ভাবি সব কাজ বাদ দিয়ে তাকে সময় দেই। থমাসের মন খারাপ দেখে নার্স বলে স্যার আমি রোগীদের পাঠিয়ে দিচ্ছি।
দৃশ্যপট পরিবর্তন হয়ে অতীতে যায়। সেখানে দেখা যায় এক দুর্ঘটনার পর তাদের হাসপাতালে আনা হয়। ডাক্তার থমাসকে বলে এক্সিডেন্ট এর ফলে ঋতু স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলেছে আর রিপোর্ট অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে তার আগে থেকেই অ্যামনেশিয়ার লক্ষণ ছিল, মানে সে সবকিছু ভুলে যেত। থমাস বলে আমি আগে কখনো তার এমন সমস্যা দেখিনি। ডাক্তার থমাস কে জানায়, আমি আপনাকে মিথ্যা বলবো না ঋতুর সমস্যা দেখে আমার মনে হচ্ছে ভবিষ্যতে ঋতুকে আপনার দেখাশোনা করতে হবে। এটা শুনে থমাস অনেক কষ্ট পায়।
অন্যদিকে আমরা ঋতুকে দেখতে পাই তার মাথায় ভালোই আঘাত লেগেছে। দৃশ্যপট আবার বর্তমানে আসে। রেমা ঋতুর আঁকা একটি পেইন্টিং প্যাকেট করে এসে ঋতুকে বলে, দিদি আপনি এখনো রেডি হননি? আমাদের তো শপে যেতে হবে। এরপর রেমা ঋতুকে হালকা মেকআপ করাতে-করাতে বলে সত্যি দিদি আপনি অনেক ভাগ্যবান স্যার সবসময় আপনার খেয়াল রাখে। আচ্ছা দিদি আপনি চুল বড় করেন না কেন? চুল বড় করলে আপনাকে অনেক সুন্দর দেখাবে! ঋতু বলে সত্যি ভালো লাগবে? রেমা জানায় হ্যাঁ দিদি অনেক সুন্দর লাগবে। এরপর তারা বাইরে আসে বিজু তাদের জন্য অপেক্ষা করছিল (বিজু মূলত রেমার হাজবেন্ড), সে পেশায় ড্রাইভার।
এরপর তারা একটি শপে আসে, শপের মালিক- রানা বলে একটু আগে জানলে আমি আপনাদের ফোন দিতাম কাল এক রিসোর্ট থেকে পেইন্টিং এর জন্য ফোন করেছিল তাই আমি আপনাদের অপেক্ষা করছিলাম। রানা পেইন্টিং নিয়ে রেমাকে 3000 টাকা দেয় তবে রেমা মাত্র 3000 টাকা নিতে নারাজ। রানা ঋতুকে বলে ম্যাডাম ব্যবসা ভালো চলছে না। ঋতু চুপচাপ রেমাকে নিয়ে বাইরে আসে। রেমা ঋতুকে বলে দিদি এই লোকটি আমাদের ঠকাচ্ছে আগেরবারের মতো এবারও তিন হাজার টাকায় দিল।
ঋতুর কোন সাড়া না পেয়ে রেমা জিজ্ঞেস করে দিদি আপনি কি ভাবছেন? ঋতু বলে, আমি ভাবছি আমার এই পেইন্টিং এত টাকা দিয়ে কে কিনছে?

অন্যদিকে থমাস গাড়িতে একটি পেইন্টিং নিয়ে তার বাড়িতে আসে। সে এক রুমে এসে পেইন্টিং ঝুলিয়ে রাখে। এখানে ঋতুর আঁকা সব পেইন্টিং দেখা যায়- মানে থমাস ঋতুর আর্ট করা সব পেইন্টিং কিনে এই রুমে টাঙ্গিয়ে রাখে। এরপর সে গান ছেড়ে ড্রিংকস করতে বসে কেয়ার-টেকার রামু তাকে মাংস এনে দেয় থমাস মাংস খেয়ে অনেক প্রশংসা করে।
রামুর হাতে গ্লাস দেখে থমাস জিজ্ঞেস করে কি খাবে নাকি? রামু একটু লজ্জা পেয়ে বলে আপনি দিলে না করবো না। থমাস এবার রামুকে একটু ড্রিঙ্কস দেয়।
বাড়ি ফেরার সময় রামু থমাসের গাড়িতে বাড়ির ফলমূল তুলে দেয়। বাসায় ফিরতেই রেমা বলে দিদি অনেক কান্না করছে থমাস ঋতুর কাছে যায় ঋতু থমাস কে বলে আমি বাগানবিলা (পেইন্টিং এর নাম) ছাড়া অন্য কোন পেইন্টিং করতে পারছি না। এরপর থমাস ঋতুকে গোসল করায় ঋতু ওয়াশরুম থেকে বাইরে আসতেই থমাস বলে তুমি কি আবারো পড়ে গিয়েছিলে? ঋতু তার কথার কোন জবাব দেয় না। থমাস ঋতুকে ওষুধ খাওয়ায় এরপর তাকে ঘুমাতে বলে। এরপর সে ঋতুর ফোন থেকে সব ছবি ডিলিট করে দেয়।
রাতে ঘুমানোর সময় ঋতু কোন এক শব্দে শুনে উঠে বসে। থমাস জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে? কোন খারাপ স্বপ্ন দেখেছো? ঋতু বলে এ বাসায় আমার অনেক ভয় লাগে। আমি নিউজে দেখেছি এমন বাসাগুলোতে চোর আসে। থমাস বলে আচ্ছা তাহলে এক কাজ করি কালকে বাসায় সিসি ক্যামেরা লাগাই। পরদিন বাসায় সিসি ক্যামেরা লাগানোর জন্য কয়েকজন লোক আসে। সেখানে আমলা নামের এক মেয়ে ঋতুকে তার ভিজিটিং কার্ড দেয়। থমাস ঋতুকে বলে তুমি এদের জন্য শরবত আনো।
রান্নাঘরে গিয়ে ঋতু হঠাৎ সব ঘোলা দেখতে শুরু করে, সে অনেক কষ্টে শরবত বানায়। তার আবারো ট্রমা শুরু হয়। ঋতু একটি ছুরি হাতে চিৎকার শুরু করে। থমাস এসে ঋতুকে শান্ত হতে বললেও ঋতু শান্ত না হলে- সে ঋতুকে থাপ্পড় মারে। ঋতু অজ্ঞান হয়ে মাড়িতে পড়ে যায় থমাস ঋতুকে তার রুমে নিয়ে যায়। থমাস বাইরে আসতেই আমলা তাকে প্রশ্ন করে স্যার ম্যাডামের কি হয়েছে? থমাস বলে আপনাদের সবাইকে দেখে ভয় করেছে তবে এখন সে ঠিক আছে। তখন আমলা থমাস কে জানায় স্যার আমাদের কাজ প্রায় শেষ আমরা একটু পরেই চলে যাব।
রাতে হঠাৎ ঋতুর ঘুম ভেঙে যায়। সে মোবাইলের ফ্লাশ অন করে এদিক ওদিক দেখতেই এক চোর এসে তাকে পেছন থেকে ধরে ফেলে।
পরদিন থমাসের মাথায় চোট দেখে এক ডাক্তার বলে আমি কি ড্রেসিং করে দেব? থমাস বলে না থাক ঋতু এসব দেখলে ভয় পাবে। থমাস হাসপাতাল থেকে বাসায় আসে। ঋতু থমাস কে বলে আমাদের কার কোথায়? থমাস বলে গাড়ি সার্ভিসিং এ দিয়েছি এরপর ঋতু ড্রইং করতে বসে। সে কি ড্রইং করবে এটা ভাবতেই তার চোখের সামনে ভেসে ওঠে সূর্যমুখী ফুল। ঋতু এবার ড্রইং না করে টিভি দেখতে বসে এবং হঠাৎ তার চোখের সামনে একটি মেয়ের মিসিং নিউজ আসে সেখানে সে দেখতে পায় মেয়েটির পড়া জামাটিতে সূর্যমুখী ফুলের ছবি রয়েছে।
ঋতু এবার কল্পনা দেখতে শুরু করে। যেখানে একটি সূর্যমুখী ফুলের বাগানে সে মেয়েটিকে দেখছে। রেমা কফি নিয়ে আসলে ঋতু রেমাকে বলে আমি এই মেয়েটিকে কোথাও দেখেছি কিন্তু মনে করতে পারছি না। রেমা বলে দিদি আমরা একদিন বাজারে গিয়েছিলাম তখন এক পুলিশ অফিসার এই মেয়েটির ছবি আপনাকে দেখিয়েছিল। এরপরেও ঋতুর মনে হচ্ছিল সে মেয়েকে খুব ভালোভাবেই জানে। ঋতু হঠাৎ তার ব্রেসলেট খুঁজে পাচ্ছে না, সে বাসার সব জায়গায় খোঁজে কিন্তু কোথাও নেই ব্রেসলেটটি থমাস ঋতুকে গিফট করেছিল।
থমাস বাসায় আসে এবং সে ঋতুকে দেখে বলে কি ব্যাপার আজ তোমাকে এত খুশি লাগছে কেন? ঋতু থমাসকে তার ড্রইং রুমে নিয়ে যায়। সে আজকে সূর্যমুখী ফুল, খরগোশ এবং একটি ব্যাটম্যানের লোগো একেছে। ছবিগুলো দেখে থমাস অনেক খুশি হয়। ঋতু থমাস কে বলে, এগুলো আমি বাচ্চাদের রুমে রাখবো। এরপর থমাস সূর্যমুখী ফুলের ছবিটি দেখতে থাকে। ঋতু খরগোশ আর ব্যাটম্যানের লোগোটি বাচ্চাদের রুমে রাখে। বাচ্চারাও এসব দেখে অনেক খুশি হয়।
Leave a comment